বরিশাল মহানগরীর ১০ নং ওয়ার্ড যেন গত ১ বছর ধরে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাওয়া একটি জনপদ। ভাটারখাল কলোনির মানুষজন মুখে কিছু না বললেও তাদের চোখের ভেতর জমে ওঠা ভয়—অভিযোগ অনুযায়ী—হঠাৎ করেই বিস্ফোরিত হলো কাঁচাবাজারের সেই দুপুরে।

বহুমুখী কাঁচাবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনেকদিন ধরেই নীরবে অভিযোগ করে আসছিলেন, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ধারী মাসুম ও তার পরিবার বাজারে চাঁদা তোলে, স্টল দখল করে, ভয় দেখায়। কিন্তু বলার সাহস পাই না!”
গতরাতে অভিযোগের আগুন যেন অগ্নিকাণ্ডে রূপ নিল।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাজারজুড়ে মানুষের গুঞ্জন থেমে যায়। সবাই থমকে দাঁড়ায়। দোকানে বসা বয়স্ক মাছ বিক্রেতা কাঁপা গলায় বলে ওঠেন, আজ পুলিশ এসেছে… হয়তো এবার আমরা বাঁচব!

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশ আসতেই মাসুম ও তার পরিবারের কয়েকজন আচমকা রেগে আগুন হয়ে ওঠে। অতর্কিতে পুলিশের ওপর হামলা করে। অবস্থান বুঝে মাসুম হঠাৎ এক কনস্টেবলের হাতে কামড়ে পালিয়ে যায়!
হামলার পরপরই পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে মাসুমের স্ত্রী রিমি বেগম, ভাই সোহেল, বোন শিল্পী ও বোন জামাই রুবেলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আর শনিবার দুপুরে আটককৃতদের মামলা দিয়ে আদালতের সোপার্দ করা হয়।
এঘটনার পর পুরো ভাটারখাল এলাকায় আতঙ্ক, চাপা উত্তেজনা আর কান্নার শব্দ একসঙ্গে মিশে যায়।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে এক দোকানি কান্নায় ভেঙে পড়েন, প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে আজ আমার দোকানটায় হাত না দেয়। প্রতিরোধ করতে গেলে মারধর, মামলা—এমনকি ঘর ভেঙেও দিয়েছে।”
আরেকজন বলেন, আমার ছেলেটা কলেজে পড়ে। ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে বলে—বাবার দোকান চালাতে হলে টাকা দে। ছেলেটা তিন রাত ঘুমাতে পারেনি।
একজন নারী দোকানি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের মেয়ে বিয়ে দিতে পারছি না—এই এলাকার নাম শুনে ভয়ে কেউ আসে না।
বাজারের একজন প্রবীণ ব্যক্তি চোখ মুছে বলেন, এই এলাকায় শান্তি বলে কিছু ছিল না। কেউ প্রতিবাদ করলে রাতের আঁধারে হামলা। শাবল দিয়ে ঘর ভাঙা—সেই শব্দ আজও কানে বাজে। মনে হয় আবার কেউ আসছে।
স্থানীয়দের দাবি, মাসুম ও তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত চাঁদাবাজি, ঘরবাড়ি দখল, মাদক ব্যবসা, প্রকাশ্যে হামলা, সাংবাদিক নির্যাতন, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৬টির মতো মামলা আদালতে চলমান আছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বহুদিন ধরে অভিযোগ পাচ্ছিলাম। আজকের ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন নিজের গতিতেই চলবে।”
অভিযুক্ত মাসুম এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভাটারখালের জনমানসে একটাই প্রত্যাশা—‘আর ভয় চাই না, শান্তি চাই’
স্থানীয় মানুষজন উর্ধ্বতন প্রশাসনের উদ্দেশে একটাই আবেদন জানাচ্ছেন—
“দয়া করে আমাদের আবার মানুষ হিসেবে বাঁচতে দিন। যারা ভয় আর আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করেছে—তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিন। আমরা আর চাঁদা দিতে চাই না। আর মারধর–হামলা দেখতে চাই না। শুধু শান্তি চাই।”
পুরো এলাকাজুড়ে এখন একটা প্রশ্ন— এই ঘটনা কি ভাটারখালের ভয়ের রাজত্ব শেষ করার শুরু?
অভিযোগ সবই অভিযোগ—তদন্তের মধ্যেই সত্য উদঘাটিত হবে। তবে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চূড়ান্ত সত্য উদঘাটনের দায়িত্ব পুলিশের বিস্তারিত তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপরই নির্ভর করছে।