বরিশালের চরকাউয়া ইউনিয়নের চরকরনজি গ্রামে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মঙ্গলবার ভোরে চরকরনজি গ্রামের স্লুইসগেট খালে বিষ প্রয়োগ করে অগণিত দেশি প্রজাতির মাছ নিধন করেছে কতিপয় অসাধু দুষ্কৃতকারী। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, চরকরনজি গ্রামে বেশ কয়েকটি খাল (মরা নদী) রয়েছে। এসব খালে নদী থেকে রুই, কাতলা, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, কইসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ আসে। সাধারণ মানুষ ঝাকি জাল, ছিপ-বরশি দিয়ে এসব মাছ ধরে সংসারের রান্নাঘরে যোগান দেয়। কিন্তু একই গ্রামের দুষ্কৃতকারী আজিজ ও জুয়েল প্রায়ই এসব খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করে আসছে।
গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন—
“আমাদের এই খালগুলো গরীব মানুষের ভরসা। আমরা প্রতিদিন এখানে মাছ ধরে সংসারে চালাই। কিন্তু যারা বিষ দেয় তারা শুধু মাছই মারে না, আমাদের জীবিকার পথও কেটে দেয়। আজ সকালে মাছগুলো লাফিয়ে উঠে মরে গেলো, দেখার মতো দৃশ্য! চোখে পানি চলে এলো।”
অন্যদিকে স্থানীয় গৃহিণী জাহানারা বেগমের কান্নাজড়িত কণ্ঠ—
“আমরা ছোট বাচ্চাদের জন্য মাঝে মধ্যে এই খাল থেকে মাছ তুলে ভাত খাওয়াই। কিন্তু আজকে বিষ মেরে মাছ মেরে ফেলছে। বাচ্চাদের মুখে কী দেবো?”
গ্রামের তরুণ ছাত্র রবিউল অভিযোগ করে বলেন—
“আজিজ আর জুয়েল বারবার এই কাজ করছে। এলাকার সবাই জানে। কিন্তু এখনো তাদের শাস্তি হয়নি। এবার যদি ব্যবস্থা না হয়, তাহলে গ্রামের মানুষই কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঘটনার পরপরই গ্রামজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে আবাল-বৃদ্ধরা জাল নিয়ে খালে নেমে পড়ে মরতে থাকা মাছ ধরতে। বিষ প্রয়োগে মরে ভেসে ওঠা মাছের স্তূপ দেখে গ্রামবাসীর মধ্যে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান—
“খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে সমাজ সচেতন মহল বলছেন, এ ধরনের পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড শুধু মাছই নয়, খালের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা আরও বাড়বে।