মৌসুম এলেও কমেনি ইলিশের দাম। বরং সরবরাহ বাড়লেও বাজারে এখনো আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে জাতীয় মাছ। নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের নাগালেও নেই ইলিশ।
সিন্ডিকেট নাকি সরবরাহ সংকট?
ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ—পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেটের কারণেই দাম বাড়ছে। জেলে থেকে পাইকার, আড়তদার হয়ে মোকাম, এরপর খুচরা বিক্রেতা—প্রতিটি ধাপে কমিশন ও লাভ যোগ হয়ে শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের কাঁধেই চাপছে বাড়তি বোঝা। তবে পাইকারি বিক্রেতারা এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, সরবরাহ কম এবং ব্যয় বেড়ে যাওয়াই ইলিশের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ।
বরিশালের পোর্ট রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী জহির সিকদার জানান, “সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই, আসলে বড় ইলিশ একেবারেই কম ধরা পড়ছে। তাছাড়া ব্যয়ও আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।”
বর্তমানে বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ১ কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৮৬ হাজার টাকায়, ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৭৬ হাজার টাকায়, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৬০ হাজার টাকায় এবং ১ কেজির ওপরে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩ হাজার টাকায়।
আহরণের ব্যয় দ্বিগুণ:
মৎস্য খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রগামী ট্রলার পরিচালনায় ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ট্রলার পরিচালনা, জেলেদের খোরাকি, বরফ, যন্ত্রাংশ, মজুরি—সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
পাথরঘাটার ট্রলার মালিক জাহাঙ্গীর খান জানান, গভীর সমুদ্রে একটি ট্রলার পাঠাতে বর্তমানে ৫ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়। অথচ মাছ বিক্রি করে কখনো ২ লাখ, কখনো ৫-১০ লাখ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। ফলে লাভ তো দূরের কথা, খরচ তুলতেই জেলেদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ক্রেতার হতাশা:
চৌমাথা বাজারে দিনমজুর আবুল কালাম আক্ষেপ করে বলেন, “জাটকার দামই ১ হাজার ২০০ টাকা, বড়গুলার কাছে তো হাতই যায় না। কিনতে পারমু না, তাই শুধু দেইখ্যা যাই।”
অন্যদিকে এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, দুই মাস অপেক্ষার পর কষ্ট করে ৩ হাজার ২০০ টাকায় ৮০০ গ্রামের দুটি ইলিশ কিনেছেন স্ত্রী-সন্তানের আবদার মেটাতে।
মৌসুমেও স্বস্তি নেই :
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। মৌসুম শেষের পথে হলেও দাম নিয়ে ক্রেতাদের কোনো স্বস্তি আসেনি। জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি ব্যয় ও সরবরাহ সংকট মিলিয়ে মৌসুমেও ইলিশ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে।