বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হলো বরিশালে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে মহানগর ও জেলা বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ।
র্যালি, মিছিল, আলোচনা সভা এবং নেতাকর্মীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি পুরো নগরীতে সৃষ্টি করে ভিন্ন মাত্রা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে নেতাদের একটাই অঙ্গীকার—আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় যে কোনো ষড়যন্ত্রের জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে।
সকালের সূচনা: পতাকা উত্তোলনে উচ্ছ্বাস :সকালে নগরীর সদর রোডে মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম শফিকুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান সবুজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ হোসেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সজীব হোসেনসহ বিভিন্ন স্তরের শত শত নেতাকর্মী।
মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন—“বিএনপি জনগণের দল। এই দল গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে, এখনও করছে। আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”
শহরজুড়ে র্যালি-মিছিলের ঢল :
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক র্যালি নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। নগরীর বন্দর রোড, কাশিপুর মোড়, চাঁদমারী এলাকা, ফজলুল হক এভিনিউসহ একাধিক পয়েন্টে নেতাকর্মীদের মিছিল দেখা যায়।
সাবেক মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদের নেতৃত্বে একটি বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সদর রোডে এসে শেষ হয়।
র্যালি শেষে তিনি বলেন—“যে দেশে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সে দেশে স্বাধীনতার কোনো মানে হয় না। বিএনপি সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছে। আমরা রাজপথে আছি, থাকব, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ সরকারকে বিদায় করব।”
নেতাকর্মীদের বক্তব্য: রাজপথে লড়াইয়ের ঘোষণা :
দিনব্যাপী বিভিন্ন র্যালিতে অংশ নিয়ে নেতারা নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে জোরালো বক্তব্য রাখেন।
জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন— “এই সরকার প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি—ষড়যন্ত্রের জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে জনগণের দল হিসেবেই বিজয়ী হবে।”
আ ন ম শফিকুল ইসলাম বলেন— “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা আজো দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। শহীদনেত্রীর নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জীবন দিতে হলেও দেব।”
মাহবুবুর রহমান সবুজ (সভাপতি, মহানগর যুবদল) বলেন— “যুব সমাজ এখন পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে। যুবদল অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে রাজপথে থাকবে। এদেশে প্রহসনের নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না।”
ছাত্রদল আহ্বায়ক সজীব হোসেন বলেন— “যারা ভোটাধিকার হরণ করেছে, তারা ছাত্রসমাজের চিরশত্রু। ছাত্রদল গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকবে।”
বিকেলের আলোচনা সভা: নেতাদের প্রাণবন্ত বক্তব্য ;
;বিকেলে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান খান।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া, সাবেক আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট শাহ আলম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা বেগম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি গোলাম মাওলা টিপু, শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল হক প্রমুখ।
সভায় নেতারা বলেন—মিজানুর রহমান খান (সভাপতি, জেলা বিএনপি):“বরিশালের মানুষ গণতন্ত্র চায়, ভোট দিতে চায়। আমরা শপথ নিচ্ছি—সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
অ্যাডভোকেট শাহীন উদ্দিন (সাধারণ সম্পাদক, জেলা বিএনপি): “বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, করে জনগণের অধিকারের জন্য। এই দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা আমাদের দমাতে পারবে না।”
রওশন আরা বেগম (সভাপতি, জেলা মহিলা দল): “মহিলা সমাজ এখন বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। নারীরা আন্দোলনের ময়দানে থাকবে, আমরা ভোটাধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরব না।”
গোলাম মাওলা টিপু (সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবক দল): “প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ দিনে আমাদের অঙ্গীকার—রাজপথ ছেড়ে দেব না। শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা মাঠে থাকবে।”
-জনগণের সাড়া ও পরিবেশ :
সকালের পতাকা উত্তোলন থেকে শুরু করে সন্ধ্যার মিছিল পর্যন্ত বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যাপক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, শ্লোগান ও মিছিল-সমাবেশে জমজমাট পরিবেশ তৈরি হয়।
একজন সাধারণ কর্মী বলেন—“আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রমাণ করেছে, বিএনপি এখনো জনগণের হৃদয়ের দল। মানুষ পরিবর্তন চায়।”
ঐক্যের ডাক :
বরিশালে দিনব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যমে রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেন। সকল বক্তার কণ্ঠেই একটাই সুর—যত বাধা আসুক, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে বিএনপি সরে দাঁড়াবে না।