নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবেশবান্ধব ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের গুরুত্ব সামনে রেখে বরিশালে আঁকা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেয়ালচিত্র। বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলা ভবনের দেয়ালজুড়ে তৈরি হচ্ছে এ ম্যুরাল। ৪৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া এ শিল্পকর্ম আঁকছে চারুশিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি দল।
শিল্পীরা জানান, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে ও ২৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আন্তর্জাতিক শিল্পী নেটওয়ার্ক ‘ফিয়ারলেস কালেকটিভ’ ও দেশীয় জীবনধারাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘গুণবতী’র যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রকল্প। এর মূল থিম ‘পরিবেশ রক্ষায় ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের গুরুত্ব’।
গুণবতী সম্প্রদায়ের পরিবেশবান্ধব বয়ন ও হস্তশিল্পকে ম্যুরালে স্থান দিয়ে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এ সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে সংস্কৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে। এই সম্প্রদায়ের শিল্পীরা সবাই নারী। প্রকল্পের শুরুতে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গুণবতী সম্প্রদায়ের কারুশিল্পীদের সঙ্গে আড্ডা, আচার-অনুষ্ঠান, গল্প ও পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তাঁদের জীবন ও সংগ্রামের গল্প সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের সেই গল্পই ফুটে উঠেছে দেয়ালচিত্রের নকশায়। ফলে এই ম্যুরাল কেবল একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং পরিবেশ ন্যায়বিচার, বয়ন ঐতিহ্য ও ওই সম্প্রদায়ের জীবন্ত দলিল হয়ে উঠছে।
দলে রয়েছেন প্রধান শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার, সহশিল্পী নন্দিনী মৈত্র (ভারত), মুহাম্মদ আয়ান, নজম আনোয়ার, থং ম্রো, এস এম নাজমুস সাকিব, জান্নাতুল ফেরদৌস ও মো. আকলাস। এ ছাড়া কৌশিক কিরণ ও মো. শোয়েব আছেন ডকুমেন্টেশন দলে। শিল্পীরা কেবল আঁকায় সীমাবদ্ধ থাকেননি; স্থানীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করেছেন এ আয়োজনে। এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ ও সংস্কৃতির গুরুত্ব উপলব্ধি করছে।
ম্যুরালে প্রতিফলিত হবে মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিদিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের নীরব শক্তি এবং গৃহিণীদের সৃজনশীল ক্ষমতা। শিল্পীদের মতে, এটি কেবল প্রদর্শনী নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যা ঐতিহ্য সংরক্ষণ, কারিগরদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই জীবনধারার চর্চা প্রসারে শক্তি জোগাবে।
পাপিয়া সারোয়ার বলেন, ‘আমরা চাই এই ম্যুরাল শুধু শিল্পকর্মে সীমাবদ্ধ না থেকে স্থানীয় নারীদের ঐতিহ্য, পরিবেশ ও সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠুক। এই চিত্র দেয়ালে থাকবে, কিন্তু এর গল্প মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’